জীবনানন্দ দাশের 'রূপসী বাংলা' কবিতায় পড়েছিলাম - "তারি নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর"। অর্ধনারীশ্বর এর অস্তিত্ব বাস্তবে না থাকলেও অর্ধেক প্রাণী অর্ধেক উদ্ভিদ রুপী সি স্লাগ এর খোঁজ কিন্তু বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলের গভীর সমুদ্রে এই বিস্ময়কর জীবের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা কিনা মাসের-পর-মাস খাওয়া-দাওয়া না করে ও দিব্যি বেঁচে থাকে।
মাঝে মাঝে ভাবি এরকম সক্ষমতা যদি আমাদেরও থাকতো তবে তো খাটাখাটনি ছাড়াও দিব্যি শুয়ে-বসে জীবনটা কাটানো যেত। বিশেষ করে আমাদের মত অলস জীবদের পক্ষে মঙ্গলজনক হত। খাটাখাটনি তো দূরের কথা সামান্য লেখালেখিতেও আমার এলার্জি। তবে আশা রাখছি প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা আপনাদের জন্য উপস্থাপন করতে পারব
ফিরে আসি মূল আলোচনায়। সি স্লাগ হলো শামুকজাতীয় একপ্রকার খোলস বিহীন প্রাণী, যাকে কিনা সৌরচালিত প্রাণী বললেও ভুল হয় না। এটির বৈজ্ঞানিক নাম এলিসিয়া ক্লোরোটিকা।
আমরা যখন প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে চিন্তা করি তখন তাদের দুটি পৃথক গোষ্ঠীতে বিভক্ত করতে যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিই, সেটি হল সূর্যের আলোর সাহায্যে যে শ্রেণী নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে তারা উদ্ভিদ আর যারা খাদ্যের ব্যাপারে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল তারা হল প্রাণী। কিন্তু এই ধারণাটিকে গুলিয়ে দিয়েছ সি স্লাগ এর আবিষ্কার। প্রায় 2 ইঞ্চির মতো লম্বা এই প্রাণীটি কখনো কখনো মুখ দিয়ে খায় আর বাকি সময় গাছের পাতার মতো নিজের পিঠ কে, সূর্যের আলোর দিকে মেলে ধরে এবং সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে নেয়। গবেষণায় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সেটা হলো তারা কিন্তু তাদের দেহে সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লোরোফিল একজাতীয় সবুজ সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে হাইজ্যাক করে। ওই জাতীয় শ্যাওলার ক্রোমোজোম 52 টি এবং সবুজ সি স্লাগ এর দেহের ক্রোমোজোম ও 52 টি।
সাম্প্রতিককালের যে গবেষণাটি হয়েছে তা জেনে আপনারা আরও অবাক হবেন পৃথিবীতে কেবল মাত্র মানুষই একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণী নয় । সি স্লাগ এর বুদ্ধিমত্তা মানুষকেও লজ্জায় ফেলবে। জাপানি গবেষক Sayaka Mitoh তার গবেষণাগারে একদিন আকস্মিকভাবে লক্ষ্য করলেন , একটি সি স্লাগ এর দেহ তার মাথা থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে পড়ে আছে। দেহটিতে প্রাণ না থাকলেও মাথা টাই শুধুমাত্র বেঁচে আছে। এইভাবে মাথাটা কতদিন বাঁচতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে Sayaka Mitoh এর চক্ষু ছানাবড়া। 22 দিন পর তিনি দেখলেন  মাথাটাই শুধু বেঁচে রয়েছে তাই নয় সঙ্গে তার শরীরটাকে পুরো তৈরি করে ফেলেছে (হোল বডি জেনারেশন)। টিকটিকির লেজ খসানোর ঘটনাটি ও তার কারণ সম্পর্কে সবারই জানা আছে , তবে সি স্লাগ এর এই অদ্ভুত আচরণের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে তাদের দেহে যদি প্যারাসাইটিক ইনফেকশন হয় তবে সেই ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই সি স্লাগরা পুরানো দেহ ত্যাগ করে আবার নতুন দেহ গড়ে তোলে । এই সব কীর্তিকলাপ- যেমন শ্যাওলা থেকে ক্লোরোফিল চুরি করে তাদের দেহে প্রতিস্থাপন ও হোল বডি জেনারেশন করার পদ্ধতি ইত্যাদি কেমন করে হয় তা এখনও গবেষণার স্তরে আছে। ভবিষ্যতে হয়তো এ সম্পর্কে আরও তথ্য আমাদের সামনে আসবে ।
আজ এত টুকুই থাক আলোচনা, পরবর্তীতে এ রকম মজাদার বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে আজ শেষ করলাম।


© রবীন্দ্রনাথ পাঠক।