নাম টি শুনে আপনারা কেউ কেউ বা হয়তো ভাবছেন পোকা আবার সোনার হয় নাকি? বাস্তবে নাম টি সোনার পোকা 'কীড়া জড়ি' হলেও মূল্যের দিক থেকে কিন্তু সোনা কেও হার মানায় ।
শুনলে হয়তো অবাক হবেন এই পোকাটির আন্তর্জাতিক বাজার দর কেজি প্রতি প্রায় লাখ চল্লিশ ।
ভারতের উত্তরাখন্ড ছাড়াও চীন, নেপাল, তিব্বতের হিমালয়ের 10-12 হাজার ফুট উচ্চতায় এদের দেখা মেলে। কিভাবে তৈরি হয় এই কি জরি জানলে আপনারা অবাক হবেন।
হিমালয়ের ঐ উচ্চতায় যেখানে ঘাস ছাড়া গাছপালা খুব একটা জন্মায় না,সেখানে যখন গুটিপোকারা আসে ঘাসের শিকর খেতে, তখন কীড়া জড়ি নামক একপ্রকার ছত্রাক ওইসব গুটিপোকা কে আক্রমণ করে গুটিপোকার দেহ থেকে রস চুষে চুষে তাদের মমি বানিয়ে ফেলে ।বসন্তকালে ওই মমি হয়ে যাওয়া মৃত পোকার মাথা ফুঁড়ে মাটির উপর বেরিয়ে আসে সেই ছত্রাক । কীড়া জড়ি মানে খালি ছত্রাক  নয়, সঙ্গে মরা পোকা টাও । 
গুটিপোকার মৃতদেহে গজিয়ে ওঠা এই বিশেষ ধরনের ছত্রাক উত্তরাখণ্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মানুষজনের জীবিকার কান্ডারী হয়ে উঠেছে । বহু শতাব্দী ধরে চীনে ওষুধ হিসেবে কীড়া জড়ি এর ব্যবহার আছে । এর গুণ বলে শেষ করা যাবে না প্রথমত এটি হিমালায়ান ভায়াগ্রা। এছাড়া সুগার, প্রেসার, হার্টের রোগ, লিভারের রোগ কিডনিতে পাথর দূর করতে , স্মৃতিশক্তি , দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এর ব্যবহার আছে। বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার হচ্ছে।
 মে-জুন মাসে যখন হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করে তখন উত্তরাখণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন সঙ্গে কিছু খাবার নিয়ে হাজির হয় কীড়া জড়ি খুঁজতে। মাঝে মাঝে এলাকা দখল নিয়ে শুরু হয় মারপিট।
এই দুষ্প্রাপ্য ভেষজ ক্রমে বিরল হতে বসেছে। বর্তমানের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। অত্যধিক হারে সংগ্রহ করার ফলে যোগান কমে গেছে। সেইসঙ্গে পরিবেশ দূষণের ফলে ভারতে এর ফলন একদম তলানিতে এসে পৌঁছেছে ।কৃত্রিম উপায়ে এর ফলন এখনো সম্ভব হয়নি। তবে চিন চেষ্টা চালাচ্ছে কিভাবে এর উৎপাদন কৃত্রিমভাবে করা যায়। 

© রবীন্দ্রনাথ পাঠক।