সেফটিপিন আবিস্কারের অজানা কাহিনী
##########################


সেফটিপিন শব্দটির সাথে কমবেশি সবাই আমরা পরিচিত। জিনিসটি কি কাজে লাগে তা হয়তো না বললেও চলবে।
বস্তুটি ছোট কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষত নারীদের ফ্যাশনের ক্ষেত্রে তো অপরিহার্য। জামার সঙ্গে উড়ুক্কু ওড়না কিংবা ব্লাউজের সঙ্গে শাড়ির আঁচল আটকে রাখতে সেফটিপিনের ব্যবহার বহু পুরোনো।
হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ এই সেফটিপিন ব্যবহার করে আসছে তবে ভিন্ন নামে। বহু বছর পূর্বে এই টাইপ জিনিসগুলোর নাম ছিল Fibulae (ল্যাটিন শব্দ) বা ব্রোচ।
সেই প্রাচীন রোমান, গ্রীক সভ্যতার সময়ের সেফটিপিন জাতীয় Fibulae বা ব্রোচ এর সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলো তারা ব্যবহার করতো কাপড় কিংবা কোন কিছু আটকাতে।
ধীরে ধীরে এরও বিবর্তন দেখা যায়।
১৭৯৬ সালে ওয়াল্টার হান্ট নিউইয়র্কের কোন এক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। টুকটাক পড়াশোনা শেষে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে তিনি অদূরেই অবস্থিত টেক্সটাইল মিলের যন্ত্রাংশের উন্নতিতে কাজ করেন। এরপর আরও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন কিংবা ব্যবহারিক উন্নতি ঘটান। কিন্তু উনার ব্যবসায়িক জ্ঞান হয় কম ছিল নয়তবা উনি টাকা পয়সা নিয়ে খুব একটা ভাবতেন না। উদ্ভাবিত যন্ত্রপাতি ধার শোধ করতে জলের দরে ছেড়ে দিতেন।
১৮৪৯ সালের কথা। এক ব্যক্তির থেকে জনাব হান্ট ১৫ ডলার ধার করেছিলেন। তিনি কিছুতেই শোধ দিতে পারছিলেন না, এদিকে পাওনাদার মাঝে মধ্যেই বাড়িতে হানা দেয়। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। একটা তার নিয়ে ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় এক মাথাতে আঁকড়ার মতো বানালেন, এরপর মাঝে একটা প্যাঁচ দিয়ে সূচালো মাথাকে ঐ আঁকড়াতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন।

ব্যস হয়ে গেল আধুনিক সেফটিপিন এর ডিজাইন। এরপর  হান্ট অন্য এক বন্ধুর পরামর্শে নিজের নামে পেটেন্ট করিয়ে তার সত্ত্ব সেই সময়ের ৪০০ ডলারে  বিক্রি করে দিলেন এবং ওই অর্থদিয়ে তার দেনা শোধ করলেন।

সেখানে থেকে ডিজাইন চলে গেল 'ডব্লিউ. আর. এন্ড কোম্পানি'র কাছে। আর এই কোম্পানি ব্যাপক ব্যবসা করলেন হান্টের তৈরিকৃত ডিজাইনটি নিয়ে। যদিও মাঝে ১৮৭০ সালের দিকে হান্টের ডিজাইনে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনা হয়। মাথার দিকের আঁকড়ার জায়গাতে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী যোগ করে দেয়া হয়। যার কারনে জিনিসটির নাম হয়ে যায় সেফটিপিন।
এভাবেই আমাদের হাতে হাতে চলে এলো আধুনিক সেফটিপিন যা আমরা কাপড় বা সুবিধাজনক কিছু আটকাতে ব্যবহার করে থাকি।
এই সেফটিপিনের সাথে আমাদের শৈশবের অনেক নস্টালজিক ঘটনা জড়িত। মা - দিদিমাদের হাতের শাঁখায় এরকম দু চারটে সেফটিপিন সব সময় আটকানো থাকতো। খেলতে খেলতে জামার বোতাম ছিঁড়লে , কত বার দৌড়ে গেছি কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে। মা অমনি হাতের শাঁখায় আটকানো সেফটিপিন খুলে জামার বোতামের জায়গায় আটকে দিত।এমনি কত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে  ছোট একটি সেফটিপিনের সাথে ,
যা ভাবলে আজও আমরা আবেগ প্রবন হয়ে যাই।।

তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।