'নেপচুন'
****************************************
আজ থেকে প্রায় ১৮ বছর আগে গ্রহের মর্যাদা হারিয়েছিল প্লুটো। সকল কে কাঁদিয়ে সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহের খেতাব পেয়ে যায় নেপচুন। ভূগোল বই আবার লিখতে হয় নতুন করে। আকাশ ভরা অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র মাঝে গ্রহ আবিষ্কার কিন্তু সহজ কোথা নয়।পরবর্তীকালে দূরবিনের আবিষ্কার কাজটাকে একটু সরল করেছিল।
 ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৪৬ সালের এই দিনে আবিষ্কৃত হয় সৌরজগতের অষ্টম ও সর্বশেষ গ্রহ নেপচুন। এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করা হয় গাণিতিক হিসাবের ভিত্তিতে। অন্য গ্রহদের তুলনায় এর আবিষ্কার হয়েছে দেরিতে। নেপচুন এতো দূরে অবস্থিত যে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, একমাত্র উন্নত টেলিস্কোপ এ দেখা সম্ভব। 
উন্নত মানের টেলিস্কোপ যেহেতু মাত্র কয়েকশো বছর আগে আবিষ্কার হয়েছে তাই নেপচুনের আবিষ্কারও হয়েছে তুলনামূলক দেরিতে।
দুজন জ্যোতির্বিদ স্বতন্ত্রভাবে  গ্রহটির গাণিতিক অবস্থান নির্ণয় করেছিলেন। একজন ব্রিটেনের জন কাউচ অ্যাডামস। অন্যজন ফ্রান্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী লা ভেরিওর।
দুজনেই দাবী করেছিলেন, তিনিই প্রথম একে আবিষ্কার করেছেন। এটা নিয়ে সমগ্র বিজ্ঞান বিশ্বে তুমুল বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের প্রধান দুই পক্ষ ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। কাকে দেওয়া উচিত নেপচুন আবিষ্কারকের খেতাব- অ্যাডামস নাকি ভেরিয়ে? আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহল দুজনকেই খেতাব দেয়ার পক্ষ দিলেন। ফলে, এখন তাই করা হয়। নেপচুনের আবিষ্কারক তাই দুজন- জন অ্যাডামস ও লা ভেরিয়ে। আবিষ্কারের সাল ১৮৪৬।তবে টেলিস্কোপ দিয়ে ১৬১৩ সালে সর্বপ্রথম নেপচুনকে দেখতে পান গ্যালিলিও। যদিও সে সময় তিনি নির্দিষ্ট করতে পারেননি এটি গ্রহ, নাকি নক্ষত্র। কারণ নেপচুনের দুর্বল গতির কারণে সে সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু বিজ্ঞানী নেপচুনকে ব্লু স্টার বলে ভুল করেছেন।

যাইহোক গ্রহদের মধ্যে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করা গ্রহের মধ্যে  গ্রহ হলো এই নেপচুন। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার । সৌরমণ্ডলের চতুর্থ বৃহত্তম এই গ্রহটি মূলত একটি বিশাল গ্যাসীয় পিন্ড। 
নেপচুন গ্যাস দ্বারা তৈরি হওয়ার কারণে এই গ্রহে কোনো মহাকাশযান ল্যান্ড করানো সম্ভব নয়। নেপচুনের জলবায়ু খুবই ভয়ঙ্কর। এখানে অধিকাংশ সময় বিশাল বিশাল ঝড় দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৮৯ সালে দেখতে পাওয়া সব থেকে বড় ঝড় দ্যা গ্রেট ডার্ক স্পট এটা প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত চলেছিল। আর এই স্পটটির আয়তন এতটাই বড় ছিল যে সেটা আমাদের পৃথিবীর আকারের সমান হবে। এর ঠিক কয়েক বছর পরই একটি ছোট ডার্ক স্পট দেখা যায়। আর এই ঝড়টির আকার আমাদের চাঁদের আকারের সমান হবে। আর এই সমস্ত ঝড় নেপচুনের বুকে ১৩০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে ছুটে বেড়ায়। 
নেপচুনের এখন পর্যন্ত ১৪টি উপগ্রহ সম্পর্কে জানা গেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম হচ্ছে ট্রাইটেন। আর এটি নেপচুনের থেকেও অধিক ঠাণ্ডা আর এর তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ১৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
যাইহোক আজ পর্যন্ত দুরতম ও ৮ম গ্রহ হিসাবে নেপচুন স্বিকৃত। ভবিষ্যতে সৌরজগৎ এ নবম কোনও গ্রহ আবিষ্কার হয় কিনা সেটা সময়ই বলবে।